গল্পঃ হারাতে চাই না তোমায় ! পর্বঃ০১

 লেখিকাঃ আরিয়া তাবাসসুম

আমার সাথে কেন এমন হলো বলতো।ও কেনো আমার সাথে এরকম করলো?কী দোষ ছিলো আমার।আমি তো ওকে আমার সবটুকু দিয়ে ভালোবেসে ছিলাম।
বলেই আবার কান্নয় ভেঙে পরলো আরিশা।
দোস্ত তুই এভাবে কাদিস না।তোকে এভাবে কাদলে মানায় না।আমাদের আরু তো ব্রেভ তাই না।বলেি সান্ত্বনা দিতে থাকলো আরিশাকে ওর বন্ধু তন্নি।
জানু আর কাদিস না প্লিজ।দেখ আমারও কিন্তু কান্না পাচ্ছে।এইসব বলে মারিয়াও আরিশাকে সান্ত্বনা দিতে থাকলো।
তন্নিঃ আরু আমার দিকে তাকা অনেক হয়েছে এবার কান্না বন্ধ আর না হলে কিন্তু আমার হাতে থাপ্পড় খাবি
মারিয়াঃ তনু বেবি এভাবে বলিস না ওর অবস্থাটা একবার বুঝ
তন্নিঃ সেই আধ ঘন্টা ধরে ও কান্না করেই যাচ্ছে এই রকম হলে তো ও অসুস্থ হয়ে পরবে।
মারিয়াও আর কিছু বললো না কী বলবে নিজেদের কাছের বন্ধুর এি অবস্থা দেখতে ওদেরও ভালো লাগছে না।আর আরিশা এখন নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে আর একদিকে তাকিয়ে আছে। এমন মনে হয় ওর ভিতর সব অনুভূতি মরে গেছে।ওদের এই সব কথার মাঝে ক্লাসের সময় হয়ে গেছে। আরিশাকে অনেক কষ্টে বুঝিয়ে ক্লাসে নিয়ে গেছে।ওর চোখ মুখ ফুলে গেছে ক্লাসের সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে। কী হয়েছে বুঝার চেষ্টা করছে কিন্তু তন্নি আর মারিয়া চোখের ইশারায় বললো কিছু হয় নি ওর শরীরটা একটু খারাপ তাই এমন লাগছে।তারপর স্যার ক্লাসে এসে ক্লাস করিয়ে চলে গেলো ওরাও বেরিয়ে গেলো কলেজ থেকে।তন্নির মনে হলো এই অবস্থায় আরুকে ক্লাসে রাখাা ঠিক হবে না।ওরা আরিশাকে নিয়ে আরিশার বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো একটা সিএনজি নিয়ে।আর ততক্ষণে পরিচয় দেই।
(এবার পরিচয় দিয়ে নেই,গল্পের নাইকা আরিশা আহমেদ।এইবার inter 1st পড়ে।দেখতে অনেক সুন্দর টানা টানা চোখ,গোলাপের পাপড়ি মতো ঠোঁট,ছিমছাম বডি,আর সবচেয়ে আকর্ষনীয় হলো ডান গালে একটা তিল।আরিশারা এক ভাই এক বোন।ওর ভাই ওর বড় ৬ বছরের।আরিশাদের নিজেদের ব্যবসা আছে তা দেখাশুনা করে আর মাস্টার্স পড়তেছে।বাবা আশরাফ আহমেদ এবং মা আদিরা আহমেদ একজন হাউজওয়াইফ। আর আরিশার সাথে এতক্ষ ম যারা ছিলো ওর বেস্ট ফ্রেন্ড তন্নি,মারিয়া। ছোট বেলা থেকে তন্নি আর আরিশা একসাথে বর হয়েছে এক স্কুলে পড়েছে এবং এখন এক কলেজেও।আর মারিয়ার সাথে ওদের পরিচয় ক্লাস ৮ থেকে।এই হলো আরিশার পরিচয়।)
আরিশার বাসার সামনে এসে সিএনজি থামলে ওরা ভাড়া দিয়ে বাসায় প্রবেশ করে।কলিং বেল বাজাতে আরুর মা আদিরা আহমেদ দরজা খুলে দিয়ে দেখে আরুরা দাড়িয়ে আছে।এই সময় ওদের দেখে যতো অবাক হয়েছে তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছে নিজের মেয়ের চেহারার এমন অবস্থা দেখে।তাই তিনি বলেন,,
আদিরা আহমেদঃ কী হয়েছে আরুর,ওকে এমন দেখা যাচ্ছে কেনো?আরু মা কী হয়েছে তোর।শরীর খাবাপ লাগছে?কোথাও ব্যাথা পেয়েছিস?আদিরা আহমেদ একনাগাড়ে এসব বলেই যাচ্ছে।
তন্নিঃ আন্টি তুমি শান্ত হও ওর তেমন কিছু হয়নি।ও ঠিক আছে। ওর মাথা ব্যাথা করছে আর তুমি তো জানো ওর মাইগ্রেন সমস্যা হলে ও কেদে কেটে সব ভাসিয়ে ফেলে।তাই ওকে নিয়ে বাসায় চলে এসেছি আমরা।তাইববা মারু বল?মারিয়াও মাথা নাড়লো বললো হ্যা ঠিক বলছে ও।
আদিরা আহমেদ ওদের কথা বিশ্বাস হলো কী না বুঝা গেলো না তাও নিজের চিন্তা এক দিকে রেখে ওদের ভিতরে আসতে দিলেন।আর তন্নিও আরুকে ধরে ওর রুমে নিয়ে গেলো।তারপর তন্নি বলতে লাগলো,
তন্নিঃ দেখ আরু আন্টি চিন্তা করছে এই রকম ভাবে থাকিস না।তুই এমন থাকলে আন্টি সন্দেহ করবে তখন কিন্তু সবটা বল দিতে হবে।এখন তুই কী চাস বল?
আরু কিছু বললো না শুধু মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রায় অনেক ক্ষন পর আরু মাথা তুলে বললো,
তোরা বাসায় চলে যায় আর আম্মুকে কিছু জানানো প্রয়োজন নেই আমি ঠিক আছি।
মারিয়াঃ হুম কী ঠিক আছিস তা তো দেখতেই পাচ্ছি।এখন যা শাওয়ার নিয়ে আয় দেখবি ফ্রেশ লগবে অনেকটা।
তন্নিঃ হুম মারু একদম ঠিক বলেছে যা শাওয়ার নিতে যা আর আমি আজকে তোর এখানে থাকবো।মারু তুই থাকতে পারবি?
মারিয়াঃ ইয়ার আমার তো থাকার অনেক ইচ্ছা কিন্তু বাসায় কী বলবো?
আরিশাঃ তোদের কাউকে থাকতে হবে না।আমি এতোটাও অচল হয়ে যাই নি।
তন্নিঃ তুই বেশি কথা না বে যা তো কে থাকবে কে না থাকবে ওটা আমরা বুঝবো।বলতে বলতে কর্বাড থেকে আরুর জামা বের করে ওর হাতে দিলে আর ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলো।আর এই দিকে মারিয়া তন্নিকে বললো
মারিয়াঃ তনু বেবি এখন কী করবি।তুই সত্যি থকবি।
তন্নিঃ হুম থাকবো।তুই যা কালকে দেখা হবে।
মারিয়াঃ ইয়ার আমার থাকার অনেক ইচ্ছা জানিস কিন্তু...
তন্নিঃ আরে তুই যা কোনো সমস্যা হবে না আমি আছি তো।আজ যদি আরুকে একা রেখে যাই আমি নিশ্চিত ও উল্টা পাল্টা কিছু একটা করবে।
মারিয়াঃ হুম😞 কী হয়ে গেলো বলতো আমাদের আরুর সাথে।ও তো এমনটা আশা করে নি।আমার কি ইচ্ছে করছে জানিস ওই আয়ান ভাইয়ের মাথাটা ফাটিয়ে দিয় তাহলে একটু শান্তি পেতাম।বেটা কী করে পারলো ওদের এত বছর রিলেশন থাকার পর আজ ওই মেয়েটার জন্য আরুকে এতো গুলা কথা শুনালো।
তন্নিঃ হুম সব ভাগ্য রে আয়ান ভাই যখন দ্বিতীয় বার ওদের রিলেশনের দোহায় দিয়ে আবার আরুর লাইফে আসলো তখন মনে হয়ে ছিলো আয়ান ভাইয়ে মাঝে আরুর জন্য আগের তুলনায় আর ফিলিংস নেই কিন্তু তারপর আস্তে আস্তে যখন সব ঠিক হতে থাকলো তখন মনে হলো না সব আগের মতোই আছে।কিন্তু দেখ আজ এতো গুলো দিন পর আয়ান ভাই আমার মনের সন্দেহ দূর করে দিলো।বলেই এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো তন্নি।
ওদের কথ শেষ হতেই আরু ওয়াশরুম থেকে বের হলো
মারিয়াঃ দোস্ত এবার আমি যাই আবার কাল দেখা হবে।আরু জান একদম মন খারাপ করবি না যা হয়েছে একটা দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যা হুম?
আরু কিছু বললো না।মারিয়া রুম থেকে বের হতেই আরুর মা আসলো আর ওর মা বললো,
কে কোথায় যবে খাওয়া দাওয়া না করে কেউ যেতে পারবে না।
তন্নিঃ আরে আন্টি আমি তো আজ থাকবো এখানে মারু চলে যাবে।আর ওকে যেতে দাও ও থাকলে সব খাবার ও একা সাবার করে দিবে পরে আমার ভাগে ওর আর কিছু রাখবে না যা পেটুক ও😒
মারিয়াঃ ওই ছেমরি আমারে কোন দিক দিয়া মনে হয় আমি পেটুক একটু বেশি খাই বলে আমি পেটুক হয়ে গেলাম😭আন্টি তুমি বলো আমাকে কী মোটা লাগে
সত্যি বলবে।
আরুর মা হেসে বললো,আরে না তোকে তো নাইকা দীপিকার মতো লাগে।
মারু এটা শুনে খুশিতে বাক-বাকুম করতে লাগলো আর আরুর মাকে একটা চুমু খেলো
মরুঃ আন্টি তোমার কথায় মন পরা ভরে গেলো এই না হলে আমার আন্টি।আর ওকে তো রিনা খানের মতেও লাগে না তাই আমাকে ও সয্য করে পারে না হু😏
তন্নিঃ হু আইছে আমার দীপিকা রে
যেই মা চেহারা,নাম রাখছে পেয়ারা 😅যা পুট এইখান থেকে সয়তান মহিলা
মারুঃ কী এতো বড় কথা আমি সয়তান।আমি সয়তান হইলে তুই পেত্নী।আর ওই ছেরি তুই আমারে মহিলা কইলি কেন😡
তন্নিঃ মহিলারে মহিলা কমু না তো কী কমু বটি😅
মারুঃ তনু ভালে হইতাছে না কিন্তু 😤
এবার আরুর মা বললো,,হয়েছে এবার চুপ কর দুজন খেতে চলো সবাই।আরুর দিকে তাকিয়ে দেখলো চোখ মুখ কেমন শুকিয়ে গেছে।তাই মেয়ের কাছে গিয়ে মাথায় হাত রেখে বললো,,বেশি খারাপ লাগছে মা?
আরু মাথা নাড়িয়ে বললো,
না আম্মু আমি ঠিক আছি।প্রচুর খুধা লগছে চলো
আরুর মাও সবাই বললো,চলো সবাই। ওরা সবাই নিছে গেলো খাবার খেতে।
আরুর প্লেটে খাবার দিলে ও তেমন কিছুি খেলো না।আসলে ওর খেতে ইচ্ছে করছিলো না কিন্তু ওর মার যতে সন্দেহ না হয় তাই খেতে বসলো।ওর এই অবস্থা দেখে তন্নি ওকে ইশারা করো খেয়ে নিতে তারপর আরুও একটু একটু করে খাবার খেতে লাগলো।
খাওয়া শেষ করে মারু চলে গেলো ওর বাসায় আর তন্নি আরুকে নিয়ে ওর রুমে চলল গেলো।রুমে গিয়ে আরুকে শুতে বলে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো তন্নি।কিছু সময়ের মাঝে আরু ঘুমিয়ে পড়লো।আরুর ঘুমিয়ে পড়া দেখল তন্নি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো তারপর তন্নি চলে গেলো শাওয়ার নিতে।
শাওয়ার নিয়ে এসে দেখে মারুর কল।ও বাসায় গেছে এটা জানিয়ে দিলো আর আরু কী করে এটাও জেনে নিলো।(কী ভাবছেন একটু আগে ঝগড়া করলো এখন আবার ভালো ভাবে কথা।আসলে বন্ধুত্ব সম্পর্কটা এমন-ই কাছাকাছি তাকলে একে অপরের পিছে পরে থকা আর দূরে গেলে চোখে হারানো।)
তন্নি ওর মোবাইল টা রাখার পর আরুর মোবাইল বেজে উঠলো আর উপরের নাম টা দেখে তন্নির রাগ সপ্তম আকাশে চলে গেলে।আরুর মোবাইলটা নিয়ে ও বেলকনিতে চলে গেলো।
কার কল আসলো আরুর মোবাইলে🤔কেউ বলতে পারবেন?
চলবে?

#entertainment

Post a Comment

If you have any doubts, So Please let me know.

Previous Post Next Post