মেঘলা আকাশের প্রেমজুরি! খন্ড পর্বঃ ০৩ ! Mona Hossain মনার গল্পকথা

 #লেখনীঃ Mona Hossain-মনার গল্পকথা


যদিও আকাশ ওয়ালেট বা জ্যাকেট নিয়ে যায় নি মেঘলার কাছেই রেখে গিয়েছে কিন্তু মেঘলা আকাশের টাকায় ড্রেস নিতে চায় না তাই কিনার জন্য নেয়া নিজের পরনের জামা জুতা খুলে নাইট ড্রেস পরে বাইরে বেরিয়ে এল,
রাস্তায় দাঁড়িয়ে মেঘলা চিন্তা করছে হোস্টেলে ফিরে যাবে নাকি আকাশের বাসায় যাবে।শপিং মল আকাশের বাসার কাছাকাছি কিন্তু হোস্টেল অনেক দূর হেঁটে যাওয়া সম্ভব না আর সে আকাশের ওয়ালেট সহ জ্যাকেট শপিং মলে রেখে বেরিয়ে এসেছে তাছাড়া তার মা বাবাও এই বাসায় আসছে তাই বাধ্য হয়েই আকাশের বাসার দিকে পা বাড়াল মেঘলা।
-আমার এখন কি করা উচিত ভাইয়ার জীবন থেকে সরে যাওয়া নাকি নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করা ?
ভাইয়া কেন আমায় ঠকাল? আচ্ছা ভাইয়া কি সত্যিই ঠকিয়েছে নাকি কোনদিন ভালই বাসে নি?হয়ত বাসেনি সবটাই আমার মনের ভুল ছিল ও আমাকে বোনের মত আদর করত আর আমি সেটাকে ভালবাসা ভেবে নিয়েছি? কিন্তু আমার এখন কি করা উচিত আমি যে ওকে ভালবাসি,খুব ভালবাসি। কি করে থাকব ওকে ছাড়া? ভাবতে ভাবতে বেখেয়ালে হাঁটছে মেঘলা।রাস্তার নুড়ি পাথরগুলো খালি পায়ে কাঁটার মত বিঁধছে কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই তার।
প্রায় মিনিট দশেক হাঁটার পর গন্তব্যে পৌছাল মেঘলা কিন্তু বাসায় ঢুকতেই আকাশ বলে উঠল,
-ওই যে শয়তানের নাম নিতে না নিতেই শয়তান হাজির হয়ে গিয়েছে যাও ছোট মা এখন ওকেই জিজ্ঞাস করো কি হয়েছিল?
নাবিলের মা মেঘলাকে আসতে দেখে বলতে লাগলেন,
-আহ আকাশ সারাক্ষন তোরা ২ টা লেগে থাকিস কেন? ছোটবেলায় ত এমন ছিলি না কত আদর করতি মেঘলাকে।
- ভুল করেছি ওকে আদর করে ভুল করেছি ও আদর পাওয়ার যোগ্যই না। এখন ইচ্ছে করে সব আদর শোধে আসলে ফিরিয়ে নিই। -
এমনিতেই ও যা করেছে তার জন্য মেজাজ খারাপ হয়ে আছে তারউপড় এমন কথা শুনে আর সহ্য করতে পারলাম না জবাব দিলাম,
-তো নিয়ে নে কে বারণ করেছে?তোর আদর কে চেয়েছে হ্যা?
আকাশ ভ্রু উঁচু করে মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলল,
- দিতে পারবি তো...??
দৃঢ় কন্ঠে জবাব দিলাম
- হ্যা অবশ্যই। চাই না তোর আদর নিয়ে যা সব...
-আচ্ছা নিয়ে নিব তখন আবার ভ্যা ভ্যা করিস না যেন...বলে আকাশ চলে গেল।
আকাশ কি বলতে চাইল বোধগম্য হল না। তাই হা করে তাকিয়ে আছি।
আকাশ চলে যেতে ছোট মা আমার ধ্যান ভেঙে বললেন
-কি যে করিস না মেঘলা আবার কি করেছিস বলতো?কাল থেকে দেখছি আকাশের মেজাজ খারাপ।তুই নিশ্চুই কিছু উল্টাপাল্টা করেছিস তাই না?
ছোট মার কথায় রাগ টা আরও বেড়ে গেল,
- কি আজব আমি কি করব?
- তুই কিছু না করলে যত ঝামেলাই হোক আকাশ ত কখনো এমন করে না একমাত্র তুই কিছু করলেই আকাশ নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলে। কাল থেকে দেখছি আকাশ কারন ছাড়াই রেগে যাচ্ছে।
- আমার জন্য না ছাঁই,নিজের প্রেমিকার আসার কথা ছিল আসে নি তাই মাথা খারাপ হয়েছে...সেটা আমি তোমাকে কি করে বলব (মনে মনে)
- এত জ্বালাস কেন ছেলেটাকে বলতো? সেই কোন সকালে তোকে আনতে গিয়েছে আর তুই কিনা ওর সাথে আসলি না...?
- ছোট মা এসব কি বলছে? হারামজাদা আমার উপড় সব দোষ চাপিয়ে দিয়েছে তাই না? আমি আসি নি নাকি ও আমাকে আনে নি...?? না অনেক হয়েছে সবার সামনে ভাল মানুষের মুখোশ পরে থাকা আর চলবে না ও যা যা করেছে আমি সবাইকে সব বলে দিব।
যেই মুখ খুলতে যাব তখনী পিছন থেকে কেউ আমাকে ডাকল
-মেঘলা..
পিছনে ফিরে দেখলাম মাম্মাম আর পাপা এসেছে সব ভুলে দৌড়ে গিয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরল,
-কেমন আছো মাম্মাম? পাপা তুমি কেমন আছো?
পাপাঃ তোমাকে ছাড়া যেমন থাকা যায়... তা তুমি কেমন আছো..
মাম্মামঃ আজ এসব থাক না কতদিন পর ওর সাথে দেখা হল। তা মেঘলা তুমি কাল এই বাসায় ছিলে বললে না ত...
কি বলব বুঝতে পারলাম না তাই তাড়াতাড়ি উপড়ে চলে আসলাম ড্রেস চেঞ্জ করার জন্য।কিন্তু এখানে আমার কোন জামাকাপড় না থাকায় ছোট মার শাড়ি পরলাম,পরলাম বলতে কোনরকম গায়ে পেঁচিয়ে নিলাম। ছোট মার রুম থেকে বের হতেই ভাইয়ার সাথে দেখা হয়ে গেল।
আমি ওকে কে পাত্তা না দিয়ে এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু হারামীটা তা হতে দিল না খপ করে হাত ধরে নিজের ঘরের দিকে নিয়ে যেতে লাগল...
- কি করছিস ছাড় বলছি...
আমার কথা যেন কানেই ঢুকল না টেনি নিজের ঘরে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়ে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল
- কি পড়েছিস এটা?
আমিও মুখ ঝামটি দিয়ে উত্তর দিলাম
- তোর কি চোখ নেই নাকি? দেখতে পাচ্ছিস না কি পড়েছি?
-চোখ আছে বলেই তো বলছি শাড়ি পড়েছিস কেন?
- আজিব,আমি কি করব না করব তার কয়ফত কি তোকে দিতে হবে?
- অবশ্যই দিতে হবে,দিন দিন সব সীমা পেরিয়ে যাচ্ছিস তুই, শরীরে এতই চাহিদা থাকলে বলতে পারিস মিটানোর ব্যবস্থা করে দিব..
ভাইয়া কথায় অবাক হলাম।আজকাল দেখি ওর মুখে কিছুই আটকায় না কত কুৎসিত একটা কথা কত অবলিলায় বলে ফেলল,
- তুই ঠিক আছিস তো ভাইয়া...?? কি বলছিস কি করছিস কোনো হুঁশ আছে?
আমার তো মনে হয় তোর ব্রেইন স্টোক হয়েছে তাই এমন আচারন করছিস।
-ফালতু কথা বাদ দে আমি তোকে ভাল করেই চিনি আর এটাও জানি শাড়ি পড়েছিস তোর লোভী বাবাকে দেখানোর জন্য যে তোকে বিক্রি করার সময় হয়েছে তাই না?
- মানে কি?
- তোর বাবা ত আর তোর বিয়ে দিবে না বিয়ের নামে মোটা টাকায় বিক্রি করবে সেটাই বলছিলাম।
- পাগলের সাথে কথা বলে লাভ নেই সামনে থেকে সর নিচে যাব।
ভাইয়া দাঁত কটমট করে বলে উঠল,
-খবরদার মেঘলা শাড়ি পড়ে তুই নিচে যাবি না।
নিজের কোমড়ে হাত রেখে চোখ বড় বড় করে ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
- তুই কে রে? যে তোর কথা আমার শুনতে হবে?
- মার খাস না মেঘলা...আমি এখন তোকে মারতে চাচ্ছি না কিন্তু শাড়ি পরা অবস্থায় কেউ যদি তোকে দেখে মেরে পা ভেঙে দিব একেবারে।
- আর একবার মেরে দেখ না তোকে যদি আমি জেলের ভাত না খাওয়াই।
-তবে রে...
-এ্যা..... এ্যা মাম্মা কোথায় গেলে দেখে যাও তোমার ভাইয়ের ছেলে আমাকে মারছে...
- ওই আমি মারলাম কোথায়?
- মারতেই ত চেয়েছিলি।
- বাড়াবাড়ি করবি না বলছি
আকাশ আর মেঘলা কথার কাটাকাটি করছে তখনী চেঁচামেচি শুনে মেঘলার মা আকাশের ঘরে আসল,
-উফ মেঘলা তুই আবার আকাশকে জ্বালাচ্ছিস?
- একদম বাজে কথা বলবে না মা আমি কিছু করি নি।তোমরা সবসময় আমাকে ভুল বুঝো সবসময় আমার দোষ দাও আর আকাশকে ভাল বলো আসলে আকাশ কে তোমরা যতটা ভাল ভাবো ও মোটেও ততটা ভাল না।
- তাত দেখতেই পাচ্ছি...
- দেখতে আর পাচ্ছো কোথায় সেই তো আমাকেই দোষ দিচ্ছো...
-তো এটা বল আকাশ তোর ছোট নাকি তুই আকাশের? নাম ধরে বলছিস মানে কি? এটা কোনধরনের ভাল মানুষী হল?
-মাম্মাম....
-চুপ ভাইয়াকে সরি বলো...
- এই হনুমান কে ভাইয়া বলতে আমার বয়ে গিয়েছে।
-ছাড়ো ফুফি এই বেয়াদবকে কথা বলে লাভ নেই একে বিয়ে দিলে কিভাবে যে সংসার করবে আমি সেটাই ভাবছি শ্বশুরঘরে ২ দিনও থাকতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে
- এই হারামি ঘষেটি বেগমের মত আমার মাকে নিজের দলে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করবি না বলে দিচ্ছি।
- বাহ এই না হলে মেঘলা কি সুন্দর মুহুর্তেই জেন্ডার বদলে দিতে পারিস একটা ছেলে কিভাবে ঘষেটি বেগম হবে সেটা আর কেউ না জানলেও মেঘলা ঠিকি জানে এই জন্যই বোধয় বলে পাগলে কি না বলে আর ছাগলে কি না খায়।
ভাইয়ার কথায় একটু লজ্জা পেলাম কারন সত্যি ভুলভাল উদাহারন দিয়ে দিয়েছি তাই ব্যাপারটা ধামাচাপা দেয়ার জন্য মায়ের হাত ধরে বললা,
-চলো তো মাম্মা এখান থেকে যাই...
নিচে যাওয়ার কথা শুনে ভাইয়া আবার রেগে গেল,
-মেঘলার বাচ্চা তোকে আমি নিচে যেতে বারণ করেছি শুনতে পাস নি?যতক্ষন না আমি বলব চুপচাপ এখানে বসে থাকবি বুঝেছিস?
মার পিছন থেকে মুখ বের করে ঠোঁট নাড়িয়ে বললাম
-মাম্ম দেখেছো তোমার আদরের ভাইপোর আচারন টা?এই কেন রে কেন তোর কথা আমি শুনব কেন?
- মায়ের আঁচলে নিচে থেকে বিড়ালের বাচ্চার মত মিউ মিউ করো কেন বাইরে এসো না সোনা তারপর বুঝাচ্ছি কেন শুনবে?
মাম্মাম অবাক হয়ে ২ জনের ঝগড়া দেখছে তখনী ভাইয়া মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-ফুফি চলোতো নিচে চলো তোমার সাথে আমার জরুরি কিছু কথা আছে এর কথা শুনলে তুমার মাথা খারাপ হয়ে যাবে তারচেয়ে চলো নিচে যাই বলেই ভাইয়া মাকে নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে আমাকে ফিসফিস করে বলল,
- বাইরে যদি আসতে হয় আমার টিশার্ট পরে আয় শাড়ি পরে আসলে তোর কপালে দুঃখ আছে।
রাগী চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছি,
- এমন একটা ভাই আমার কপালে জুটার ছিল আমার কপাল টাই আসলে খারাপ কেন যে ওর মত একটা ভাই হয়েছিল। নিজের যা ইচ্ছে হবে সেটাই করবে আমি করলেই দোষ।আমি কি ওর কেনা গোলাম নাকি? ভাল লাগে না।
মার খাওয়ার ইচ্ছে নেই তাই গিয়ে ওয়াড্রপ খুললাম কিন্তু নবাবজাদার একটাও কালারফুল টিশার্ট নেই সব কেমন ফ্যাকাশে কালার দেখেই মেজাজ খারাপ হচ্ছে একজন মানুষের এত খারাপ রুচিবোধ কি করে হতে পারে ভেবেই পাচ্ছি না সাদা কালো ছাড়া কি এর চোখে কিছু পড়ে নাকি?নাহ আমার মত কিউট একটা মেয়ে এমন হালকা রং এর ড্রেস পরতে পারে না,কিছুতেই না তাই গলা ছাড়লাম
-ভাইয়া... এই ভাইয়া এখনী এদিকে আয়
ভাইয়া রীতিমত ছুটে এসেছে কিন্তু দরজায় এসে ধমকে দাঁড়াল তারপর ঘরে ঢুকতে ঢুকতে ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকাল।
আমি কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম
- কি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
- কি করেছিস এসব...??
- কি করেছি?
- হারামী আমার জামা কাপড় গুলো মেঝেতে কি করছে?
ভাইয়ার কথা জ্ঞান ফিরল তাকিয়ে দেখি আমি পছন্দমত টিশার্ট খুঁজতে গিয়ে ওর সব ড্রেস নিচে ফেলে দিয়েছি কি করব বুঝতে না পেরে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ৩২ দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে দিলাম।
ভাইয়া দাঁত কামড়ে বলে উঠল,
- কারোর জীবন লন্ডবন্ড করে দেয়ার জন্য তোর ১০ মিনিটেই যথেষ্ট দেখতো ১ মিনিটে কি অবস্থা করেছিস ঘরটার?
ভাইয়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিচে বসে কয়েকটা জামাকাপড় তুলে নিয়ে ঠেলে ওয়াড্রপে ঢুকিয়ে দিলাম। সাথেসাথেই ভাইয়া আবার চেঁচিয়ে উঠল
মুখ ভোঁতা করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম
-আবার কি হয়েছে?
- কোন বুদ্ধিতে তুই পড়ে থাকা কাপড়গুলো বাকি কাপড়ের সাথে মিশিয়ে দিলি এখন ওয়াড্রেপ ভর্তি সব কাপড় কে ধুবে শুনি?
বোকা বোকা মুখ করে ভাইয়াকে বল্লাম
- সব ধুতে হবে কেন?
- তো আমি কি করে জানব কোনটা নিচে পড়েছিল?
- তো ধুয়ার কি দরকার এগুলো কি নোংরা হয়েছে নাকি এভাবেই তো পরা যাবে।আমার ড্রেস তো রাস্তায় পরে থাকলেও ধুতাম না.
-তোর ধুতে হয় না কারন তোর আকাশ নামের একটা বডিগার্ড আছে যে তুই কখন কি খাবি কখন কি পরবি সব দিকে খেয়াল রাখে প্রতিদিন যে গোছানো ড্রেস হাতের কাছে পাস তা কি এমনি এমনি? নিজের ড্রেস তো সারা হোস্টেলময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখিস আকাশ অর্ডার দিয়ে সেগুলো কুড়িয়ে এনে ধোয়ায় তাই সব হাতের কাছে পাস।
- না পেলেও ধুতাম না।
-খাচ্চোর মেয়ে...আমি তোর মত এত নোংরা না তাই পরতে পারব না
-ঠিক আছে তাহলে সব ধুবি
- কে ধুয়ে দিবে তুই?তোর শ্বাশুড়ির ধোয়া আমার পছন্দ হয় না জানিস না..?
-এটা ও কি বলল? আমার শ্বাশুড়ি মানে কি? ও কি নিজের মাকে আমার শ্বাশুড়ি বলে দাবি করল?
(মনে মনে)
-উল্টাপাল্টা চিন্তা বাদ দে...
-এই ভাইয়াটাও না সব কথা বুঝে যায় ভাল লাগে না। অই আমি কিছু ভাবছি না বুঝেছিস?
- কি ভেবেছিস আকাশ এতই বোকা? কিছুই বুঝবে না? আমি তোকে শাড়ি খুলতে বলেছি জন্যে আমাকে দিয়ে এতগুলো কাপড় ধুয়ানোর প্লেন করছিস তাই না কত হারামি তুই চিন্তা কর। কিন্তু সেগুড়ে বালি এই সব কাপড় আমি তোকে ধোয়াব আর এখন ঘরও পরিষ্কার করাব।
-আমার তো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই আমি জীবনেও এসব করব না
- পিঠে কয়েকটা পড়লেই সব করবে মনা..
-আজাইরা পেচাল বন্ধ করে বল সুন্দর সুন্দর ড্রেস গুলো কোথায় রেখেছিস.
- যতই তালবাহানা কর কাপড় আমি ধোয়েই ছাড়ব আচ্ছা থাক আজ লাগবে না অন্য দিন দিস এখন তাড়াতাড়ি চেঞ্জ কর।
-চেঞ্জ করে পরব কি? এখানে সব মরা কালারের টিশার্ট
আমার একটাও পছন্দ হচ্ছে না।
- কালার আবার মরা হয় কিভাবে?
- হয় রে বাবা হয় এই যে সাদা কালো অফ হোয়াইট ব্লু এগুলো কি বেঁচে আছে সব তো মরে গিয়েছে. লাল সবুজ হলুদ কমলা টিশার্ট কিনতে পারিস না?এসব মরা রং আমার পছন্দ না।
- তা হবে কেন যাত্রাপালার নায়িকা না সাজলে ত আপনার ভাল লাগে না চুপচাপ টিশার্ট পর হারামী
-সুন্দর টিশার্ট দে
-এগুলোই সুন্দর
-তাই তো বলি আমার মত কিউট একটা মেয়েকে রেখে কিভাবে অন্য মেয়ের প্রেমে পড়ে আসলে এর রুচিই খারাপ হু হু..(মনে মনে)
- কিছু বলছিস মনে হচ্ছে?
- হ্যা তোর রুচি যে কতটা খারাপ সেটাই বলছিলাম
-তবে রে... দাঁড়া মজা দেখাচ্ছি
ভাইয়া এগিয়ে আসতেই সব ভুলে দিলাম দৌড় পরনে শাড়ি ছিল মনেই নেই ধরাম করে নিচে পড়ে মনে পড়ল আমি শাড়ি পড়েছিলাম
কোনোমতে উঠে বসে মুখ ফুলিয়ে ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখলাম তীব্র বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে আছে ভাইয়া।
-হয়েছে শান্তি? শাড়ি পরতে নিষেধ করেছিলাম বলেই উল্টো ঘুরে দাঁড়াল ভাইয়া।
কাঁদো কাঁদো সুরে ভাইয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে বল্লাম
-ব্যাথা পেয়েছি ভাইয়া।
ভাইয়া আবারো আমার দিকে ফিরে তাকাল আর বলল
- কোমড় টা ভেঙে গেলে আরও ভাল হত বলেই দরজার দিকে হাঁটা দিল।
আমি ব্যাথা পেয়েছি বল্লাম তাও চলে যাচ্ছে কত পাষান হয়ে গিয়েছে ভাইয়া ভেবেই আমার ছোট,অবুঝ,নিষ্পাপ মনটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। চোখ বন্ধ করে ছোট একটা শ্বাস নিলাম কিন্তু পরক্ষনেই অনুভব করলাম আমাকে কেউ কোলে তুলে নিচ্ছে। তাড়াতাড়ি মিটমিট করে চোখ তুলে তাকালাম আর অবাক হলাম আরে এটা ত ভাইয়া...!!
আমি স্বপ্ন দেখছি না তো ইচ্ছে করছে নিজেকে চিমটি কেটে পরিক্ষা করে নিতে কিন্তু ভাইয়ার কোলে থাকায় চিমটি কাটা হল না।
দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ভাইয়া দরজা লাগিয়ে নিয়েছে।
ভাইয়া আমাকে কোলে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলল,
- পা দুটো নিচে ঝুলিয়ে বস আমি এখনী আসছি বলেই উঠে গেল ভাইয়া।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই নিজের টাওয়াল আর পানি নিয়ে ফিরে এসে আমার সামনে বসল ভাইয়া। কি করতে চাইছে কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না।
ভাইয়া হটাৎই মেঝেতে বসে পানিতে টাওয়াল ভিজিয়ে নিয়ে আমার পায়ে লাগিয়ে দিল। রাস্তায় হেঁটে আসায় পা লাল হয়ে গিয়েছিল ঠান্ডা টাওয়াল ছুয়াতেই অনেকটাই আরাম পেলাম তবে অবাক না হয়ে পারলাম না কারন ভাইয়া নিজের টাওয়াল কাওকে ইউজ করা তো দূর টাচ করতেও দেয় না কিন্তু এখন সেই টাওয়ালেই দিয়েই রাস্তা নোংরা পরিষ্কার করছে।
-ভাইয়াকে তো আমি বলি নি আমার পায়ে জ্বালা করছে তাহলে জানল কি করে?অস্পষ্ট সুরে প্রশ্ন করলাম,
- ক ক কি করছিস ভাইয়া..??
ও কি শুনল না নাকি শুনেও ইচ্ছে করেই উত্তর দিল না বুঝলাম না। খুব মনোযোগ দিয়ে পা মুছছে সে। মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে এটা ছাড়া পৃথিবীর বাকি কোনো কিছুর কোন অস্তিত্ব নেই,থাকতেই পারে না।
ভাইয়া এমনেই যখন ভালবাসে মন প্রাণ উজার করে বাসে আর যখন কষ্ট দেয় সেটাও পাহাড় সমান।
ভাইয়ার মনোযোগে বিঘ্ন ঘটাতে চাইনা তাই চুপ করে বসে দেখছি।
-কি মায়া আছে ওই মুখে,কোন টানে নিজেকে হারিয়ে ফেলি নিমিষেই?কেন এই অদ্ভত ভালবাসায় তলিয়ে যাই অকারনেই?কেন সেচ্ছায় ভালবাসা নামক কারাবাসে আবদ্ধ হয়ে থাকতে চাই জন্ম জন্মান্তর?
হঠাৎই ২ জনের নীরবতা ভেঙে ভাইয়া বলে উঠল
-স্টুপিডের মত রাস্তায় না হাঁটলেই চলছিল না?
-আমি উত্তর দিলাম না।
ভাইয়া আবারো প্রশ্ন করল
-জ্বালা কমেছে..??
নিজের অজান্তেই মুখ থেকে বেরিয়ে গেল
- কমে নি বেড়েছে,বহুগুণে বেড়েছে নিভু নিভু অগ্নি দাবানলে রুপ নিয়েছে? কেন করিস এমন?
ভাইয়া মুচকি হেসে আমার পাশে এসে বসে আমার হাত টেনে ভেজা স্পর্শে লাল হয়ে যাওয়া জায়গাটা চেপে ধরে বলল,
- ভালই তো কবিতা বলিস আগে কিন্তু জানতাম না..
বুঝতে পারছি আমি আবারও ওর হাসির মায়ায় নিজের নিয়ন্ত্রন হারাচ্ছি।
হঠাৎই নিজের মনের সাথে অঘোষিত যুদ্ধে নেমে পড়লাম মনকে বারবার বুঝনোর চেষ্টা করতে লাগলাম ভাইয়া আমায় নয় নন্দীনিকে ভালবাসে কিন্তু আমার অবুঝ মন কতটা বুঝল জানি না।
নিজেকে সামলানোর প্রাণপন চেষ্টা করে চলেছি কিন্তু পারছি কই?
খুব যে বলতে ইচ্ছে করছে যাস না ভাইয়া আমাকে ছেড়ে যাস না তোর এই রাগ মাখানো ভালবাসা ছাড়া আমি যে থাকতে পারব না।


Post a Comment

If you have any doubts, So Please let me know.

Previous Post Next Post