উৎপল দাস
প্রকাশঃ শনিবার, ২ জুলাই, ২০২২, ভোরের পাতা থেকে সংগৃহীত।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তিনি সাংগঠনিক সম্পাদক। আওয়ামী লীগের উপ কমিটির সদস্য থেকে সরাসরি সাংগঠনিক সম্পাদকে চলে আসা তিনি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুঃসময়ে সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। কিন্তু আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েই নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে এলোমেলোভাবে উপস্থাপন করার পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তান এবং টি আর কাবিখার টাকা আত্নসাতের অভিযোগে দুদকে মামলা হওয়া ব্যক্তিদেরও আওয়ামী লীগে পদায়ন করছেন। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিকের কথা। এক শফিকের কারণেই গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে ব্যাপকভাবে বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের অনুপ্রবেশের সুযোগ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে তারা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে সাখাওয়াত হোসেন শফিকের শাস্তিও দাবি করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা ভোরের পাতাকে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা হওয়ার পর থেকেই গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন উপজেলা কমিটিতে অর্থের বিনিময়ে রাজাকার সন্তানদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছেন। এছাড়া সম্মেলনের পরে গভীর রাতে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে সার্কিট হাউজ অথবা অন্য কোথাও বসে কমিটি ঘোষণা করেছেন।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেয়া মহিবুল হাসান মুকিতের পরিবারের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠার পর গঠিত তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিকের পরামর্শে গত ১৩ মার্চ পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের পাঁচ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে সভাপতি পদে শামিকুল ইসলাম লিপন, সহ সভাপতি সাইফুল্লাহ রহমান চৌধুরী তোতা, সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মণ্ডল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান মুকিতের নাম ঘোষণা করা হয়।
কমিটি ঘোষণার পর পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম কেন্দ্রে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেন যে মুকিতের পরিবারের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তবে মুকিত এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলে আসছেন, তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্রের শিকার। এমনকি জামায়াতপন্থী পিতাকে মুকিত মুক্তিযোদ্ধা হিসাবেও প্রচার করতে শুরু করেন। যদিও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা মুকিতের পিতা হাবিবুর রহমানকে জামায়াত নেতা হিসাবেই চিনেন। পলাশবাড়ীর বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নজরুল ইসলাম (সেনাবাহিনীর গেজেট নং-২৭৪৬, সেক্টর-৭) লিখিতভাবে ভোরের পাতাকে জানিয়েছেন , ‘‘পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান মুকিত সম্পর্কে যে অভিযোগ উঠেছে তা সম্পূর্ণ সত্য। মুকিতের পিতা হাবিবুর রহমানকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর যে ভুয়া তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে তা রীতিমত হাস্যকর এবং সঠিক নয়। কারণ ২০১৩-১৪ সালে পলাশবাড়ী উপজেলার প্রফেসরপাড়াস্থ তার বাসা থেকে জামায়াত ও শিবিরের সকল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। তার বাবা হাবিবুর রহমান এবং মা মালিহা বেগম সরাসরি জামায়াত শিবিরের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে তা পলাশবাড়ীবাসী অবগত।’’
এদিকে, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান মুকিতের পরিবারের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠার পর গঠিত তদন্ত কমিটির দিকে তাকিয়ে আছে এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা আওয়ামী লীগ। কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সুলতান আলী মন্ডলকে। সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক পিয়ারুল ইসলাম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জরিদুল হক ও দপ্তর সম্পাদক সাইফুল আলম সাকাকে। এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা থাকলেও তা এখনো রহস্যজনক কারণে জমা দেয়া হয়নি। এক্ষেত্রে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত কমিটির একজন ভোরের পাতাকে বলেন, মহিবুল হাসান মুকিতের পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। তবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদকের নিষেধ রয়েছে।
এদিকে, ত্রিবার্ষিক সম্মেলন শেষে আব্দুল লতিফ প্রধানকে সভাপতি ও মোকাদ্দেস আলী বাদুকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গত ১৮ জুন জেলার গোবিন্দগঞ্জ সরকারী কলেজ মাঠে সম্মেলন শেষে অতিথিরা গাইবান্ধা সার্কিট হাউসে গিয়ে ১৯জুন ভোরে কমিটির নাম ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য, সভাপতি আব্দুল লতিফ প্রধান টিআর কাবিখার ২৩ কোটি টাকার চাল আত্নসাতের দুদকের মামলার আসামি। এছাড়া গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধানের বিরুদ্ধে ফ্রিডম পার্টির লোকজনকে সহায়তা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৫ সালে জামায়াতের রেলে নাশকতা মামলার আসামি মিলনকে অব্যাহতি দিয়ে তার মাধ্যমে জেলা পরিষদের ডাক বাংলোর জায়গা দখল করার পাশাপাশি শাহ মোখলেছুর রহমান দুলুর চাতালের ৬ শতাংশ জমি দখল করেছেন। এছাড়া দুলুর পৈত্রিক সম্পত্তি জমির দাগ নং-৪৬৮ ও ৪৬৯ জমিটি দখল করে নিজে সেখানে বাড়ি করেছেন। উপজেলা নির্বাচনে ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তার লতিফ প্রধানের নিজ কেন্দ্রে নৌকার ভোট ছিল যথাক্রমে ৩২ এবং ৪২। দলীয় পদ ব্যবহার করে এই লতিফ প্রধান বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা আত্নসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ বাগিয়ে নিতেও প্রায় কোটি টাকা খরচ করেছেন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।
এছাড়া, গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের নতুন কমিটিতে সহকারী অধ্যাপক আব্দুল জলিল সরকারকে সভাপতি ও মো. শহীদুল্যাহ-হেল কবির ফারুককে, সেখানে অর্থনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিককে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি, এমনকি ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তিনি তার প্রতিউত্তর করেননি।