২০২০ সালে করোনা মহামারির শুরুতেই সরকার যখন মানুষের জানমাল রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে, ঠিক সেই সুযোগে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে ড. কামালের নেতৃত্বাধীন একটি চক্র। বিএনপি-জামায়াত ও তাদের বিদেশি কুশীলবদের ধারণা ছিল, করোনার ধাক্কায় ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ মারা যাবে। মুখ থুবড়ে পড়বে অর্থনীতি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী পদক্ষেপের কারণে খুব অল্প ক্ষয়ক্ষতিতেই করোনার প্রথম ধাক্কা থেকে রক্ষা হয় এবং এখন পর্যন্ত সফলভাবে এটি মোকবিলা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু থেমে থাকেনি দেশবিরোধীদের ষড়যন্ত্র। এদেশেরই কিছু বিদেশি এজেন্টের সহায়তায় এই মহামারির মধ্যেও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রমূলক থ্রিলার ও কাল্পনিক সংবাদ প্রকাশিত হয় বাংলাদেশকে নিয়ে।
আন্ডারগ্রাউন্ড পোপাগান্ডা মেশিন হিসেবে কুখ্যাত ‘নেত্র নিউজ’-এর সাংবাদিক তাসনিম খলিল ও ড. কামালের জামাই ডেভিড বার্গম্যানদের দেওয়া মিথ্যা তথ্যের ওপর ভর করে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করানো হয় বিশ্বের কয়েকটি গণমাধ্যমে। বাংলাদেশবিরোধী এই চক্রটি চেয়েছিল, করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থ হোক বাংলাদেশ, করোনার কারণে আর্থিক সংকট সৃষ্টি হোক, দুর্ভিক্ষ শুরু হোক, গণমৃত্যু হোক। মহামারিকে কেন্দ্র করে জনক্ষোভ সৃষ্টির মাধ্যমে অস্থিরতা তৈরি করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা করেছিল এই উগ্রবাদী চক্র। কিন্তু বাস্তবে তাদের আশা পূরণ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষতায় এবং সরকারি-বেসরকারি কর্মচারি ও রাজনীতিবিদদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সেই দূরাবস্থা কাটিয়ে ওঠে বাংলাদেশ। ফলে গণমুখী রাজনীতির মাঠে ব্যর্থ বিএনপি-জামায়াত, উগ্রবাদী ও দেশবিরোধী চক্রটি মহামারির থেকে যে ফায়দা লুটতে চেয়েছিল, সেই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়।
এরপর আরো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এই চক্রটি। বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত ও উগ্রবাদী গোষ্ঠীদের সঙ্গে নিয়ে অনলাইনজুড়ে ছড়াতে শুরু করে জঙ্গিবাদের বিষবাষ্প। বিকৃত করতে শুরু করে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। অপপ্রচার ও গুজব ছড়াতে থাকে সরকারের বিরুদ্ধে। এমনকি সেনাবাহিনীর ভেতরেও উস্কানি দিতে থাকে তারা। এক্ষেত্রে চাকরিচ্যুত সেনা সদস্য শহীদ উদ্দীন ও দেলোয়াররা কয়েকমাস ধরে টানা উগ্র বক্তব্য দেওয়া অব্যাহত রাখে। সরকার যখন করোনার মতো অতিমারি মোকাবিলায় দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিল, ঠিক এরকম একটি সময়ে দেশের মানুষের জান-মাল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় নেত্র নিউজ, তাসনিম খলিল, ডেভিড বার্গম্যান, ড. কামাল হোসেনরা এ পিনাকীরা।
এর আগে, ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল আল জাজিরার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়- করোনার প্রভাবে বাংলাদেশে ২০ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এই মহামারি মোকাবিলা করতে পারবে না বলেও মন্তব্য করে তারা। একই বছরের ২৩ মার্চ আরও একটি বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রচার করে জাজিরা। কোনো সূত্র ও তথ্য ছাড়াই জাজিরা দাবি করে- বাংলাদেশের মানুষ ভয়ে আছে, দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই। মূলত আল জাজিরার বিশেষ কন্ট্রিবিউটর ও নেত্র নিউজের অন্যতম সম্পাদক ডেভিড বার্গম্যানের উদ্যোগে এসব সংবাদ প্রকাশ করিয়ে দেশজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল।
এছাড়াও ইকোনোমিস্ট, টেলিগ্রাফ, ডয়চেভেলের মতো গণমাধ্যমেও বাংলাদেশকে নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হয়েচে। সুশীল সমাজের ছদ্মবেশে এসব প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞ হিসেবে এসব তথ্য ও বক্তব্য দিয়েছেন ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান, ইউরোপপ্রবাসী দুই বাংলাদেশি পিনাকী ভট্টাচার্য ও তাসনিম খলিল। অথচ এই ব্যক্তিরা বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণার ক্ষেত্রে অনেক আগে থেকেই চিহ্নিত।
অথচ বাস্তবতা পুরোটাই উল্টো। করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বিস্ময় হিসেবে অভিহিত করেছের ইকোনমিক ফোরাম। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও চলমান উন্নয়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মন্তব্যও ইতিবাচক। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে এই মহামারির মধ্যেও ছিন্নমূল প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার মানুষকে বাড়ি তৈরি করে দিয়েচে সরকার। কর্মহীন হয়ে পড়া ও নিম্নবিত্ত এক কোটি মানুষকে নিয়মিত খাদ্য ও অর্থ দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামের অভাবে মারা যায়নি কেউ। খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে গেছে ঘরে ঘরে। মানুষের প্রাণ বাঁচাতে প্রাণান্ত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। অথচ একদল ক্ষমতালিপ্সু নরপিশাচ চেয়েছিল লাখ লাখ মানুষের লাশ মাড়িয়ে ক্ষমতার স্বাদ নিতে।