সূত্রঃ বিবিসি বাংলা
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণ করেছেন। রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান। এর ফলে শেখ হাসিনা পঞ্চম বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন।
দুজন টেকনোক্র্যাট-সহ সাঁইত্রিশ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভায় আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ডঃ হাছান মাহমুদকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মোহাম্মদ আলী আরাফাতকে করা হয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী।
এছাড়া বিদায়ী সরকারের শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে নতুন মন্ত্রিসভায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রী করে প্রথমবারের মতো পূর্ণমন্ত্রী হওয়া মুহিবুল হাসান চৌধুরীকে শিক্ষামন্ত্রী করা হয়েছে।
মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথের কয়েক ঘণ্টা আগে শেখ হাসিনাকে আবারো প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ এবং তার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে রাষ্ট্রপতির সম্মতিসূচক প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এই প্রজ্ঞাপনেই বলা হয় যে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সাথে সাথে আগের মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে বলে গণ্য হবে।
ওই প্রজ্ঞাপন জারির পর আরেকটি প্রজ্ঞাপনে রাষ্ট্রপতি যাদের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন তাদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও পূর্ণমন্ত্রী ২৫ জন আর প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ১১ জনের নাম প্রকাশ করা হয়।
এরপর শপথ অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেলে আরেকটি প্রজ্ঞাপনে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের দফতরের নাম প্রকাশ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
গত সাতই জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২২২টি আসনে জয়লাভ করে। যদিও নির্বাচনটি ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে অবাধ ও সুষ্ঠু’ হয়নি বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
তবে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন বলেছে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে এবং তাদের হিসেবে নির্বাচনে ৪১ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছে।
বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন শেখ হাসিনাকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করান। এ নিয়ে টানা চতুর্থবার এবং মোট পঞ্চমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন তিনি।
শেখ হাসিনা সন্ধ্যা সাতটায় প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করেন। এরপর তিনি গোপনীয়তার শপথ পাঠ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা ও পরিবারের সদস্যরা, নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা ছাড়াও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা, সাবেক মন্ত্রী, সামরিক বেসামরিক সিনিয়র আমলারা উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আব্দুল কাদের সিদ্দিকী শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর শপথের আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাষ্ট্রপতি নতুন নিয়োগ পাওয়া মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের শপথ বাক্য পাঠ করান।
শপথ অনুষ্ঠানের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রাত আটটার দিকে দফতর বণ্টনের প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এর আগে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্যরা বুধবার জাতীয় সংসদে শপথ গ্রহণ করেন।
ওই দিনই আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের বৈঠকে শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা, বেগম মতিয়া চৌধুরীকে উপনেতা ও নূর এ আলম চৌধুরীকে চীফ হুইপ নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়।
পরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতিকে এ সিদ্ধান্ত অবহিত করা হলে তিনি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগে সম্মতি দিয়ে তার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা গঠনের আহ্বান জানান।
গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় কারা পেলেন
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার গত দু বছরের বেশি সময় ধরে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করছে।
সংকট মোকাবেলায় এ সময়ে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলেরও দ্বারস্থ হতে হয়েছে সরকারকে। এমনকি নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়নি বিদায়ী অর্থমন্ত্রী আহম মোস্তাফা কামালেরও।
ফলে নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী কে হন সেদিকেই বেশি আগ্রহ বা কৌতূহল ছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে।
শেষ পর্যন্ত দায়িত্বটি পালনের জন্য শেখ হাসিনা দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত আবুল হাসান মাহমুদ আলীকেই বেছে নিলেন। তিনি এর আগে শেখ হাসিনা সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন।
এছাড়া ২০২১ সালে মানবাধিকার ইস্যুতে র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর থেকে পশ্চিমা বিশ্ব ক্রমাগত সরকারের ওপর ওপর একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য প্রচণ্ড চাপ তৈরি করেছিল।
বিশেষ করে নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য ভিসা নীতি ঘোষণা করলে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমাদের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের।
এবার চীন, ভারত, রাশিয়া ও জাপানসহ অনেক দেশ দ্বাদশ নির্বাচনে জয়লাভের জন্য শেখ হাসিনাকে অভিনন্দিত করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বলেছে নির্বাচনটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি।
সব মিলিয়ে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে গত দু বছরের অস্বস্তিকর অবস্থার জেরে এবার আর মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয়নি গত মন্ত্রিসভার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের।
তাদের পরিবর্তে দেশের শীর্ষ কূটনীতিক হিসেবে শেখ হাসিনা বেছে নিয়েছেন বিদায়ী সরকারের তথ্যমন্ত্রী ডঃ হাছান মাহমুদকে।
মি. মাহমুদ ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত এ নিয়ে তিনবার শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেলেন।
এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ওপরেই আস্থা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপি-সহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনটি বর্জন করায় নির্বাচনের দিনে ভোটার উপস্থিতি খুব কম ছিল বলেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে উঠে এসেছে।