তারিখঃ ২৭/১০/২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার
![]() |
| GBN News |
"আমার আসামি খালাস পাবে না বললে জাতি বলবে আমিই ফাঁসি চাই": বিচারকের সাথে ফাঁস আইনজীবীর কথোপকথন ফাঁস
বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার এবং রাষ্ট্রের পক্ষে নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবী আমির হোসেনের মধ্যকার একটি গোপন কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর দেশের বিচারিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। এই সংলাপের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আইনজীবী আমির হোসেনের (যিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্র কর্তৃক নিযুক্ত হিসেবে পরিচিত) একটি বিস্ফোরক মন্তব্য, যা প্রমাণ করে রাষ্ট্রের নিয়োগ পাওয়া একজন ডিফেন্স আইনজীবীকেও চরম রাজনৈতিক ও বিচারিক চাপের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
ফাঁস হওয়া এই মন্তব্যটি দেশের বিচার প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। আইনজীবী আমির হোসেন কার্যত স্বীকার করেছেন যে, জনসমক্ষে তার মক্কেলের খালাস না পাওয়ার কথা বললে, এমন বার্তা যেতে পারে যে তিনি নিজেই আসামীর মৃত্যুদণ্ড (ফাঁসি) চান।
"ল’ইয়ার ফাঁসি চায়" – এমন অভিযোগের ভয়
ফাঁস হওয়া সংলাপে, আইনজীবী আমির হোসেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের উদ্বেগের জবাবে তার অবস্থান পরিষ্কার করেন। বিচারপতি তার ঘন ঘন মিডিয়াতে বক্তব্য দেওয়া এবং মামলার ফলাফল নিয়ে আগাম মন্তব্য করার কারণ জানতে চেয়েছিলেন।
জবাবে, আইনজীবী আমির হোসেন তার পেশাদার দায়িত্ব এবং তার উপর থাকা অলিখিত চাপ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেন। সেই ব্যাখ্যায় তিনি যে মন্তব্যটি করেন, তা আইনের শাসন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এক বিপজ্জনক ইঙ্গিত বহন করে:
"আমি যদি বলতাম আমার আসামি খালাস পাবে না, তাহলে তো মানে জাতি এবং মাননীয় আদালত, লর্ডশিপও বলবেন যে কেমন ল'ইয়ার আমি স্টেট ডিফেন্সে নিয়োগ দিয়েছি যে আসামীর ইয়ে ফাঁসি চাই। তো এটা আরও খারাপ। আপনার জন্যেও খারাপ, আমার জন্যেও খারাপ।"
আইনজীবীর এই বক্তব্য থেকে পরিষ্কার যে, রাষ্ট্রের নিযুক্ত একজন আইনজীবীর পেশাগত স্বাধীনতা গুরুতরভাবে খর্ব হয়েছে। তিনি তার মক্কেলের পক্ষে সর্বোচ্চ আইনি চেষ্টা প্রকাশ না করলে, তাকে সরাসরি 'আসামীর শত্রু' এবং 'মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশী' হিসেবে চিহ্নিত করার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
বিচারকের উদ্বেগ: "বিচার তো কোনো পর্যায়েই নাই"
সংলাপের শুরুতে বিচারপতি (বক্তা ১) আইনজীবীর ঘন ঘন মিডিয়াতে কথা বলা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "আপনি এখানে শুধু কিছু কথা বলেন, মিডিয়ার সামনে দেন, এমনও কিছু কথা বলেন। এ বিচার তো কিছুই না, এখন তো কোনো পর্যায়েই নাই।"
বিচারপতির এই মন্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, মামলার প্রাথমিক পর্যায়েই আইনজীবী তার বক্তব্য দিয়ে বিচারিক প্রক্রিয়ার বাইরে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছেন, যা আদালতকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। জবাবে আইনজীবী আমির হোসেন দাবি করেন, তার এই বিশ্বাস ও চেষ্টা প্রকাশ করা তার আইনি অধিকার, যা তার দায়িত্বের অংশ।
বিচারিক মহলে তোলপাড়: রাষ্ট্র কি বিচারপ্রার্থীকে ফাঁসি চাওয়াতে বাধ্য করছে?
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফাঁস হওয়া এই কথোপকথন রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থার একটি গুরুতর দুর্বলতাকে উন্মোচন করেছে। সাধারণত, একজন ডিফেন্স আইনজীবী তার মক্কেলের পক্ষে দৃঢ় বিশ্বাস ব্যক্ত করবেন, এটি স্বাভাবিক। কিন্তু রাষ্ট্র কর্তৃক নিযুক্ত আইনজীবীকে যদি তার মক্কেলের অনুকূলে কথা না বলার জন্য 'ফাঁসি চাওয়া'র অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার ভয় পেতে হয়, তবে তা বিচার প্রক্রিয়ার ওপর রাষ্ট্রের সর্বগ্রাসী রাজনৈতিক প্রভাবকে স্পষ্ট করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুপ্রিম কোর্টের একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মন্তব্য করেন, "রাষ্ট্র কর্তৃক নিযুক্ত প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের কাজ আসামীর পক্ষে কথা বলা, সরকারের পক্ষে নয়। কিন্তু এই বক্তব্য প্রমাণ করে যে, তারা সরকারকে খুশি করার এবং জনমানসে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার রাখার দ্বৈত চাপে রয়েছেন। যদি কোনো আইনজীবী তার মক্কেলের জন্য পেশাদারভাবে দুর্বলতা প্রকাশ করতে না পারেন, তবে এটি ফেয়ার ট্রায়াল (ন্যায্য বিচার) নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি ভয়াবহ ব্যর্থতা।"
আইনজীবী আমির হোসেনের এই মন্তব্য এখন বিচারিক ও রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, শেখ হাসিনার সরকার কর্তৃক নিযুক্ত এই আইনজীবীকে যদি তার মক্কেলের খালাসের সম্ভাবনা নিয়ে সামান্যতম সন্দেহও প্রকাশ করতে হয়, তবে তাকে উল্টো শেখ হাসিনার মক্কেলের ফাঁসি চাওয়ার দায়ে অভিযুক্ত হওয়ার মতো চরম মানসিক চাপের শিকার হতে হচ্ছে। এটি বিচার প্রক্রিয়ার ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের এক নজিরবিহীন উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
#আইনজীবী_ফাঁসি_চায়
#রাষ্ট্রের_চাপে_বিচার
#বিচারকের_গোপন_সংলাপ
#আমির_হোসেনের_বিস্ফোরক_মন্তব্য
#ন্যায়বিচার_প্রশ্নবিদ্ধ
#Humanrights #humanrightswatch #un #unitednation #europe #usa #russia #ukraine #president #law
