ভিলেন ! পর্বঃ০১ | Mona Hossain-মনার গল্পকথা

 Gazi Snigda Hossain (মনা)



আকাশের এন্ট্রি দেখে যে কারোরেই ভয় পাওয়ার কথা আকাশ একা নয় সাথে আরো অনেকগুলি ছেলে আছে।সবার হাতে বন্দুক আছে।
আকাশকে আসতে দেখেই আরোহীর বাবা এগিয়ে গেলেন...
আকাশঃ সামনে থেকে সরুন আংকেল বুঝতেই পারছেন আজ আমি কারোর কোন কথাই শুনব না আরোহীকে আমি নিতে এসেছি পৃথিবীর কোন শক্তিই আজ ওকে আমার কাছে থেকে সরাতে পারবে না তাই অযথা ঝামেলা বাড়িয়ে কি লাভ?সরুন প্লিজ।
কয়েকটা ছেলে আরোহীর বাবাকে সরিয়ে দিল।আকাশ এবার আরোহীর কাছে গেল।
আজ আরোহীর বিয়ে বাড়ি ভর্তি আত্মীয় স্বজন পাত্র পক্ষও চলে এসেছে কিন্তু বিয়ে পড়ানোর আগ মুহুর্তে আকাশ নামের এই মসীবত এসে হাজির হয়েছে।
আকাশ এবার আরোহীর সামনে গিয়ে দাঁড়াল।
তারপর আরোহীর থুতনিতে হাত দিয়ে বলল বাহ কি সুন্দর সেজেছিস রে আরোহী...দেখি দেখি বাপরে লিপষ্টিক পরেছিও তাও লাল রং এর।
আকাশ এবার আরোহীর হাত টেনে বলল মেহেদীও পড়েছিস নাকি দেখি বাহ সাহস তো ভালই হয়েছে দেখতে পাচ্ছি...
তবে এটা বুঝলাম না সেজেগুঁজে ঢং করার অধিকার তোকে কে দিল..??একবারো বুক কাঁপলো না?
আকাশের কথা বলার ধরন দেখেই আরোহীর পরাণ পাখি উড়ে গেল কারন আকাশ সাধারনত এভাবে কথা বলে না...আর মেয়েদের গায়ে হাত তো একেবারেই দেয় না।তাও এত লোকের সামনে....
আরোহী ভয়ে ভয়ে বলল ভ ভ ভ ভাইয়া বস না...
আকাশঃ হ্যা বসতে তো পারতামেই কিন্তু হাতে যে একদম সময় নেই বোন অনেক কাজ বাকি। চল তোকে এখন আমার সাথে যেতে হবে।
আরোহীঃ আ আ আমার তো আজ বিয়ে ভাইয়া আমি কি করে যাব..... কথা শেষ হওয়ার আগেই আকাশ স্বজোরে আরোহীর গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল।
আরোহী ছিটকে গিয়ে নিচে পড়ল।আকাশ গিয়ে আরোহীর চুলের মুটি ধরে টেনে তুলল..
আকাশঃ আজ তোর কি যানি আবার বল..?শুনতে পাই নি।আকাশ দাঁতে দাঁত চেপে বলল আমাকে না জানিয়ে তুই বিয়ের পীড়িতে বসিস এত সাহস কই পেলি? আচ্ছা চল তোর বিয়ে করার শখ আমি মিটিয়ে দিচ্ছি।বলেই আরোহীকে টানতে লাগল আকাশ।
আরোহীঃ তুই আমার কাজিন হয়ে এমন ভিলেনের মত আচারন কি করে করতে করছিস ভাইয়া?
আকাশঃ মুখ দিয়ে আর একটা শব্দ বের হলে এখানেই মেরে পুঁতে রেখে দিব বলে বরপক্ষের সামনেই আরোহী কে নিয়ে আকাশ বেরিয়ে গেল।
আকাশের সাথের ছেলেদের প্রত্যেকের হাতে গান ছিল তাই কেউ কিছু বলার সাহস পেল না।
আকাশ আরোহীকে গাড়ীতে করে নিয়ে যাচ্ছে...
চলুন এবার দেখে আসি এই আরোহী আর আকাশ কে...
ফ্ল্যাশব্যাক
আরোহীঃ কিছুক্ষনের মধ্যেই আমি আত্মহত্যা করব এটাই সিধান্ত নিয়েছি। তাই বলে ভাব্বেন না আমি পাগল শুধু শুধু মরে যাবার মেয়ে আমি নই। এই আত্মহত্যার পিছনেও একটা যুক্তিসংগত কারন আছে।
কারনটা হল আজ আমার ব্রেকাপ হয়েছে।
কেন ব্রেকাপ হয়েছে জানতে চেয়ে লজ্জা দিবেন না প্লিজ কারন সুনির্দিষ্ট কারন টা আমি নিজেও জানি না। শুধু জানি বয়ফ্রেন্ড বলেছে আমি নাকি সিগারেট খাই তাই আমাকে ছেড়ে দিয়েছে।
এবার আপনারাই বলুন আমার কি বেঁচে থাকা উচিত? না না না কিছুতেই না। এ জীবন আমি রাখব না এখনি ৬ তলার উপর থেকে ঝাঁপ দিয়ে আমি আত্মহত্যা করব যে পৃথিবীতে ভালবাসার কোন দাম নেই আমি সেখানে থাকতে চাই না চাই না চাই না.....!!!
কিছুটা ফিল্মি স্টাইলে ডায়লগ গুলি বলে শেষ করল আরোহী।
আরোহীঃ যাক সিনেমার মত বলে ফেলেছি এবার লাফ দিলেই কাজ শেষ ভাবতে ভাবতে হামাগুড়ি দিয়ে নির্মানাধীন নতুন বিল্ডিংয়ের ছাদের কার্নিশ এর উপড় উঠে দাঁড়াল আরোহী।
এবার চোখ বন্ধ করে ঝাঁপ দিতে হবে। যখনি চোখ বন্ধ করলাম তখনি কেউ আমার হুডির টুপি ধরে বিড়ালের বাচ্চার মত টেনে নামাল।
আমাকে কে এভাবে নামাচ্ছে ভুত নয় তো? ভয় লাগছে তো...
কিন্তু পিছন ঘুরে দেখলাম এটা আকাশ ভাইয়া। দেখে অবাক হই নি কারন জীবনে যত উল্টা পালটা কাজ করেছি সব জায়গাতেই তার উপস্থিতি ছিল।আজও থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।
আকাশ আমার মামাত ভাই আমি স্কুল এন্ড কলেজে পড়ি আমার স্কুলেই সে কলেজে আর আমি স্কুলে পড়ি। আকাশ ১ নাম্বারের হারামি একটা ছেলে। ভিলেন বল্লেও কম হবে।তাকে দেখে একটু ঘাবড়ে গেলাম কারন সে আমার সাথে ফ্রি হলেও মাঝে মাঝে খুব রাগ দেখায়।তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি।
_আকাশ গম্ভির গলায় জিজ্ঞাস করল, কিরে আরোহী আত্মহত্যার ট্রেনিং দিচ্ছিলি নাকি আত্নহত্যা করছিলি কোন টা?
আমি জবাবে বললাম_আত্মহত্যা করছিলাম।
আকাশ_কেন?এবার আত্মহত্যার কারন?কি হয়েছে আবার ব্রেকাপ হয়েছে?
আমি_হ্যা
আকাশ_তা এটা তোর কত নাম্বার ব্রেকাপ?
আমি- তুই এটাও জানিস না তোর সাথে তো কথা বলাই উচিত না।
আকাশঃ তা অবশ্য ঠিকি বলেছিস ছোট বোন কবে কার সাথে ডেট করছে কবে ব্রেকাপ করছে আমার জানা উচিত ছিল।আমারি ভুল
_আমাকে ইনসাল্ট করবি না বলে দিলাম। আমি তো আর তোর মত স্টার নই যে সবাই আমার পিছে পিছে ঘুরবে।১৬টা ছেলেকে ভালবাসলাম ১৬ টাই আমাকে ছেড়ে চলে গেল। এ জীবন রেখে কি করব? আমি আর রাখব না।
আকাশঃ যাক আরো একটা ছেলের জীবন বাঁচল তাহলে...তোর হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে মানে বিরাট ব্যাপার।
আরোহী_কি বললি?
আকাশঃ কই কিছু না তো...তা এবারের ব্রেকাপের কারন কি?
_বরাবরেই মত এবারেও সঠিক কারন জানি না তবে বলেছে আমি নাকি সিগারেট খাই।
আকাশঃ ও খাস না বুঝি..??
_মাঝে মাঝে একটু খাই বেশি না তো... তাই বলে ব্রেকাপ করে দিতে হবে?
আকাশ ফোন টিপতে টিপতে কথা বলছিল
এবার আরোহীর দিকে তাকিয়ে বলল তোর বয়স কত?
_এটাও জানিস না? তোর ত ভাই হওয়ার কোন যোগ্যতাই নেই।
আকাশঃ আমি জানি তোর বয়স কত। তোর বয়স ১৫ বছর এই ১৫ বছরে তুই ১৭ টা প্রেম করেছিস এবার লজ্জা হওয়া উচিত না?
_আমি কি করব আমি তো ভালভাবেই প্রেম করি ছেলেগুলি কেন জানি কিছুদিন পর আমাকে ছেড়ে দেয়।আমার তো মনে হয় এর পিছনে নিশ্চুই কোন রহস্য আছে।
আকাশঃ বুঝলাম...প্রেম করতে খুব ভাল লাগে তাই না?
_হুম খুব
আকাশঃ কেন ভাল লাগে?
_ এই যে সুন্দর ছেলেদের সাথে প্রেম করলে আমার ফ্রেন্ডগুলা জ্বলে তারপর ক্লাসের ছেলেগুলির কাছে ডিমান্ড বেড়ে যায় তারপর বয়ফ্রেন্ড আমাকে সুন্দর বলে আমাকে নিয়ে কবিতা লিখে গিফটস দেয় হোস্টেলের সামনে সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকে খুব ভাল লাগে এগুলি।তুই তো কখনো করিস নি বুঝবি কি করে?
আকাশঃ থাক আমাকে না বুঝালেও চলবে যা এবার হোস্টেলে যা।
_ভাইয়া ওই ভাইয়া শোন না..
আকাশ.....
_এ ভাইয়া একটু শোন না...
আকাশ ফোনের দিকে মুখ করে উত্তর দিল হঠাৎ সুর বদলে গেল ব্যাপার কি?
আরোহীঃ একটু তাকা না আমার দিকে...
আকাশঃ পারব না গেম খেলছি...যা বলার আছে বল আমি শুনছি
আরোহীঃ আমি দেখতে কেমন?
আকাশঃ খারাপ না
আরোহীঃ জীবনে কখনো তাকিয়ে দেখেছিস বলে মনে হয় না তাই সুন্দর বললি না..
আকাশঃ বানিয়ে বলতে হবে?
আরোহীঃ না থাক খারাপ না বলিস এই অনেক সব মেয়েকেই তো খারাপ বলিস।আচ্ছা ছাড় শুন না।
আকাশঃ শুনছি তো
আরোহীঃতুই না খুব সুন্দর দেখতে
আকাশঃ জানি,সবাই বলে নতুন করে বলার কি আছে।
আরোহীঃ আরে ব্যাপার টা বুঝ এই সুন্দর ওই সুন্দর না।আমি বলতে চাচ্ছি যে আমার তোকে ভাল লাগে।
আকাশঃ সেতো তোর সব ছেলেকেই লাগে।
আরোহীঃ ধুর বাবা আমি বলতে চাচ্ছি যে
আকাশঃ বলতে না চেয়ে কি বলতে চাস বলে ফেল...
আরোহীঃ প্রেম করবি আমার সাথে?
আকাশ ফোনের দিক থেকে মুখ সরিয়ে আরোহীর দিকে তাকিয়ে বলল প্রেম করলে কি হবে?
আরোহীঃ আমার স্টেস্টাস টা অনেক বেড়ে যাবে ফ্রেন্ডরা হিংসা করবে আমায় বলবে দেখ আরোহীর বয়ফ্রেন্ড কত হেন্ডসাম।তোর জন্য কত মেয়ে পাগল তুই তাদের পাত্তা দিস না আমাকে যদি দিস আমার কত পাওয়ার বেড়ে যাবে ভাবতে পারছিস?আর তুই তো কখনো ব্রেকাপ করবি না তাহলে আমার প্রেম করার শখ ও পূরন হবে...
এমনেতেও তো প্রতিদিন আমি কোন না কোন ঝামেলা করি আর তুই সেটা মিটাতে আসিস।তখন নাহয় প্রেম করতে আসবি তুই যদি প্রেম করিস প্রমিজ করছি আমি আর কোন ঝামেলা করব না।
এবার আকাশ আরোহীর গাল লাল করে থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলল বেহায়াপনার সব সীমা পেরিয়ে গেছিস তুই।
চল নিচে চল....
আরোহী গালে হাত দিয়ে বলল যাব না আমি তুই আমায় মারলি কেন?
আকাশঃ তো কি আদর করব? বলেই আরোহীর জ্যাকেটের টুপি ধরে নিচে নিয়ে যেতে লাগল।
আরোহীঃ ছাড় বলছি যাব না আমি তোর সাথে এভাবে বিড়ালের মত কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?
আকাশঃ মেয়েদের গায়ে হাত দিতে ঘিন্না করে আমার তাই এভাবে নিয়ে যাচ্ছি চুপচাপ চল যা বলব তাই করবি তা না হলে তোর একদিন কি আমার একদিন।
আরোহীঃ কি আর করবি? আজ তো আমি সুসাইড করবই একে তো ব্রেকাপ হলো তার উপর তুই আমাকে রিজেক্ট করে দিলি জানিস ফ্রেন্ডগুলা আমাকে কত ইনসাল্ট করবে বিএফ না থাকলে? আমি আজ মরে যাব।
আকাশ আরোহীকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছিল আরোহী এটা বলার পর আকাশএকটু থেমে ধাক্কা দিয়ে আরোহীকে নিচে ফেলে দিল।
আরোহীঃ আ আ আ আ.....
.
.
.
.
কয়েকটা সিঁড়ির পরে গিয়ে থামল। কিন্তু হাতে ছিলে গেছে পায়েও ব্যাথা পেয়েছে।আরোহী কান্না জুড়ে দিয়েছে... কাঁদতে কাঁদতে বলল কি করলি এটা...??
আকাশঃ ফেলে দিলাম...
আরোহীঃ কেন?
আকাশঃ এই কয়টা সিঁড়ি থেকে পরে গিয়েই কেঁদে দিলি?
আর তুই তো ৬ তলার উপর থেকে ঝাঁপ দিতে চেয়েছিলি..ফেলে দিয়ে দেখালাম পড়ে গেলে কেমন লাগত
আরোহীঃ লাফ দিলে তো মানুষ মরে যায় ব্যাথা পায় নাকি?
আকাশঃ গাধা কত প্রকার আছে ভাবা যায়? কি মনে হয় তোর?এর পর থেকে যখন সুসাইড করতে চাইবি যদি লাফ দিয়ে মরতে চাস আগে এক তলা থেকে লাফ দিবি দেখবি কেমন লাগে।
যদি গলায় দড়ি দিতে চাস দেওয়ার আগে কিছুক্ষন গলার চেপে ধরে দেখবি কেমন লাগে।
যদি হাত কাটতে চাস আগে আংগুল কেটে দেখবি সহ্য করতে পারিস কিনা ঠিক আছে...
আরোহীঃ সোসাইড করলে এত ব্যাথা পাওয়া যায়? তাহলে মানুষ সোসাইড করে কেন?
আকাশঃ ভালো মানুষরা করে না তোর মত সাইকোরা করে...।ফাউল সর সামনে থেকে নামতে দে..
আরোহীঃ ওমা আমায় নিবি না?
আকাশঃ নিব মানে চলে আয়।
আরোহীঃ পায়ে ব্যাথা পেয়েছি তো।
আকাশঃ তো আমি কি করব?
আরোহী মুখ শুকনা করে বলল দেখনা ভাইয়া হাত থেকে রক্ত পড়ছে ছিলে গেছে পুরো...
আকাশঃ আমাকে দিয়ে কষ্ট করানোর ধান্দা এই তো? চিনি না আমি তোকে বদের হাড্ডি কোথাকার।
কিন্ত আমি মেয়েদেয় টাচ করি না থাপ্পড় মারাটা অন্যব্যাপার তাই বলে কোলে নেওয়া জাস্ট অসম্ভব। নিজে নিজে নাম বাহলে বসে থাক।
আরোহীঃহাত টা তো অন্তত বেঁধে দে।রক্ত পড়ছে জ্বালা করছে...
আকাশঃ ফুফিমনি তকে একটা অপদার্থ বানিয়েছে এইটুকু ছিলে গেলে কি হয়? এটা আবার বাঁধতে হয়?আর বাঁধব কি দিয়ে?
আরোহীঃ তোর রুমাল দিয়ে।
আকাশঃ আচ্ছা দিচ্ছি...
আরোহী এবার দেখ এই রুমাল দিয়ে আমি তোকে কিভাবে ফাঁসাই আমার সাথে ভিলেনি করিস তাই না?
.
.
.
.
.
.
রহস্যময় চরিত্র আকাশকে নিয়ে আবার ফিরে এসেছি এবারের নায়িকা মেঘলার মত না মেঘলা তো বোকা ছিল এটা পুরাই সাইকো।
চলবে নাকি...???

Post a Comment

If you have any doubts, So Please let me know.

Previous Post Next Post